অনিয়মিত রুটিন এবং ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই ওজন বাড়ার সমস্যায় ভুগি। কিন্তু যখন ব্যায়াম করার কথা আসে তখন অনেক অজুহাত আমরা দেখাই। আপনি যদি একটি সুন্দর ফিট এবং সুস্থ শরীর চান তাহলে আপনাকে এর জন্য পরিশ্রম করতে হবে। কারণ বাংলায় একটা কথা আছে ‘কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না।’ গায়ত্রী শর্মা যিনি রাজস্থানের সিরোহিতে একটি ফিটনেস সেন্টার পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, ‘ফিট হও মানে সঠিক রুটিন অনুসরণ করার পরে আপনাকে আর কোন কিছু করা দরকার পড়বে না,
ঠিক যেমন আপনি আপনার বাকি রুটিং এর সাথে করেন একইভাবে আপনার ব্যায়াম এবং ডায়েট সঠিক এবং নিয়মিত ও সঠিক রাখুন আপনি নিজেই ফিট থাকবেন।’ 2015 সাল নাগাদ গায়ত্রী এবং তার স্বামী আদিত্য শর্মা বাড়তি ওজন নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন কিন্তু এই দম্পতি তাদের কষ্টের বিষয়ে অভিযোগ করার পরিবর্তে এটিকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। যাইহোক শুরুতে তাদের জন্য এটি সহজ ছিল না। শিক্ষা বিভাগের সরকারি চাকরি করা আদিত্য নিজের জন্য কোন সময় পেতেন না। 2015 সালে তার ওজন ছিল প্রায় 72 কেজি। তার মাপের জামা কাপড় পাওয়া যেত না। সেই সময়টাই ছিল তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট যখন তিনি তার স্বাস্থ্যের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তিনি প্রথমে নিয়মিত ব্যায়াম শুরু করেন এবং সঠিক খাবার সম্পর্কে জানতে একটি নিউট্রিশন এর কোর্স করেন। তিনি মাত্র তিন মাসে তার শরীরে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। যাই হোক তিনি শুধু সঠিক সময় সঠিক পরিমাণ খাবার খেতেন । গৃহবধূ হওয়ায় গায়ত্রী তার স্বামী ও সন্তানের খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্ব নিতেন। গায়ত্রী বলেন, ‘আমি আমার স্বামীকে ফিট হতে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। যেহেতু আমি ওদের জন্য সঠিক প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রান্না করতাম যা ছিল সাধারণ বাড়িতে তৈরি খাবার। তাই আমি ভাবলাম কেন আমিও এই ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করছি না।’ এভাবে গায়ত্রীও বাড়ি থেকে ব্যায়াম শুরু করেন।
বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর পর সকালের খাবার বানিয়ে তিনি নিয়মিত ব্যায়াম করতে থাকেন। তিনি বাড়িতে তার শশুর, শাশুড়ী এবং শিশুদের জন্য তাদের পছন্দের আলাদা আলাদা খাবার তৈরি করতেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা নিরামিষভোজী তাই আমরা প্রোটিনের জন্য পনির, পালং শাক ও সোয়া চাঙ্ক ইত্যাদি খাওয়ার ওপর জোর দিয়েছি।’ তিনি খাবার প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং সুস্বাদু করার জন্য ভাত, সবজি, চাল ইত্যাদিতে সোয়া এবং পনির ব্যবহার করেন। মাএ ছয় মাসের মধ্যে আদিত্য কুঁড়ি কেজি এবং গায়ত্রী 10 কেজি ওজন কমিয়ে ফেলে।
গায়েত্রী বলেন, ‘আমাদের পরিবারে প্রত্যেকেরই উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস আছে অথচ আমাদের এখনো কোন রোগ নেই।’ গায়েত্রীর বয়স যখন মাত্র 18 বছর তখন তার বিয়ে হয়ে যায়। যেহেতু সে তার ফিটনেসে মনোনিবেশ করতে শুরু করে সে তার পরিবার এবং শহরের বিখ্যাত হয়ে ওঠে। অনেক মেয়ে এবং মহিলা তাকে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করে। তিনি বলেন, ‘আমি লক্ষ্য করি যে ছোট শহরে দ্বিধা এবং গৃহস্থালী কাজের কারণে মহিলারা কোন ধরনের ব্যায়াম বা জিমে যেতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে যদি একজন মহিলা তাদের ফিট থাকতে শেখায় তাহলে সে অবশ্যই শিখবেন।’
আজকে গায়েত্রী একজন নিউট্রিশন কোচ 2016 সালে তিনি নিজের ফিটনেসসেন্টার শুরু করেছেন। গায়ত্রী খুশি হয়ে বলেন যে, ‘আমার কঠোর পরিশ্রম আমাকে শুধু আগের চেয়ে সুস্থ করে তোলে নি বরং একটি নতুন পরিচয় দিয়েছে।’ এখনো পর্যন্ত এই দম্পতি অনলাইন এবং অফলাইন প্রশিক্ষণ দিয়ে 2500 জনকে উপকৃত করেছেন। 2018 সালে তাদের শরীরে রূপান্তরের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। এছাড়াও গায়েত্রী এবং আদিত্য অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তারা এই পরামর্শ দেন যে, ‘যতটা সম্ভব আপনার বাড়ির খাবারের প্রতি জোর দেওয়া উচিত।
ক্ষুধার্ত থেকে কখনোই আপনি ওজন কমাতে পারবেন না। অতএব খাবারের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিন। একটি অভিনব খাদ্য গ্রহণ করার পরিবর্তে আপনার চারপাশে পাওয়া যায় এমন সবজি এবং ফল খান যেগুলি আপনাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেবে। পরিবারের সাথে নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং আপনি আপনার ব্যায়ামের শুভসূচনা হাঁটার মাধ্যমে শুরু করতে পারেন।’ আপনি এই ফিট দম্পতির সম্পর্কে আরো জানতে এবং তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। ফিটনেস সম্পর্কিত তত্ত্বের জন্য আপনি গায়ত্রীর ইনস্টাগ্রাম পেজ ফলো করতে পারেন।।