জন্মাষ্টমী ভারতের অন্যতম প্রধান একটি উৎসব। ভারতের বাইরের বিভিন্ন দেশেও জন্মাষ্টমী অত্যন্ত সমারোহের সাথে পালন করা হয়। এমনকি সরকারি ছুটি পর্যন্ত থাকে ভারতে। কৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে পালন করা হয় জন্মাষ্টমী। বাঙালি কাছে কৃষ্ণ শুধু দেবতাই নন , কারোর কাছে ভাই তো কারোর কাছে পুত্র। নিঃসন্তান বা পুত্রহীন দম্পতি কৃষ্ণের গোপাল রূপকে পুত্র হিসেবে প্রতিপালন করেন। গোপাল ঘরে ঘরে পূজিত হয় পুত্ররূপেও।
গোপালকে দিনে নিয়মমাফিক খাওয়ানোর পাশাপাশি করানো হয় স্নান ও পোশাক পরিবর্তন। বিশেষ করে জন্মাষ্টমীর দিন কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে অর্পণ করা হয় ছাপান্ন রকমের সুস্বাদু পদ। কিন্তু কেন অন্যান্য পুজো উৎসবের নৈবেদ্য থেকে কৃষ্ণের নৈবেদ্য ভিন্ন রকমের ? কৃষ্ণের ছাপান্ন রকমের ভোগ নিয়ে রয়েছে বহুল প্রচলিত জনশ্রুতি।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, দেবতা ইন্দ্র ব্রজবাসীর উপর প্রবল বৃষ্টিপাত বর্ষণ করেন। ফলে ব্রজবাসী অত্যন্ত অসহায় হয়ে শরণাপন্ন হন কৃষ্ণের। কৃষ্ণ ব্রজবাসীর রক্ষার্থে বিশালাকায় গোবর্ধন পর্বত আঙ্গুলের উপর তুলে ধরে থাকেন। উঁচু হয়ে যাওয়া গোবর্ধন পর্বতের নিচে আশ্রয় নেন ব্রজবাসীগণ। দেবতা ইন্দ্র সাতদিন ধরে নিরবধি এই বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছিলেন। সাত দিনই ব্রজবাসী আশ্রয় নিয়েছিলেন গোবর্ধন পর্বতের নিচে। মা যশোদা প্রতিদিন কৃষ্ণকে দৈনিক আট বার করে খেতে দিতেন। তাই ব্রজবাসী ওই নিরন্তর বৃষ্টির মধ্যেও সাতদিন ধরে কৃষ্ণকে দৈনিক আট বার নানা সুস্বাদু পদ বানিয়ে দিতেন। সাত দিন ধরে দৈনিক আটটি পদ, অর্থাৎ মোট ছাপান্নটি পদ ব্রজবাসী কৃষ্ণের জন্য তৈরি করেছিলেন।
তাই প্রতি বছর জন্মাষ্টমীতে কৃষ্ণের নৈবেদ্য হিসেবে রাখা হয় ছাপান্ন রকমের পদ। যদিও কৃষ্ণকে তাঁর ভক্তবৃন্দ খুশি হয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী যতগুলি পদ নিবেদন করুক না কেন তিনি তাই গ্রহণ করেন। কৃষ্ণ প্রেমীরা তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী ডালা সাজিয়ে দেন। ছাপান্ন ভোগের মধ্যে রয়েছে চাটনি, মোহনভোগ, মালপোয়া, রাবড়ি, তিলের নাড়ু, কাজু, বাদাম, ক্ষীর, পিঠে, রসমালাই, খিচুড়ি, বেগুনি, নানা ধরনের শাকসবজি, মোহনভোগ, চাটনি, পাপড়, পায়েস, দই, মুগ ডালের হালুয়া, রসগোল্লা, জিলিপি, মাখন প্রভৃতি সুস্বাদু পদ। অনেক ভক্ত আবার ভালোবেসে প্রতিবছর কুড়ি রকমের মিষ্টি সাজিয়ে দেন শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে।