স্ত্রী সঙ্গীতার জন্মদিন। তাই তাকে এবং বছর আড়াইয়ের মেয়ে সানবীকে নিয়ে শুক্রবার কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পার্কে বেড়াতে গিয়েছিলেন দমদমের বাসিন্দা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী সুবীর পাল।
বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আরও অনেকের সঙ্গে তারাও ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ গেটের বাইরে একটি টিনের ছাউনির নীচে আশ্রয় নেন। সেটাই কাল হল। ছাউনির কাছেই বাজ পড়ে জমা পানিতে। সেই পানি পায়ে লাগতেই ছিটকে পড়েন বছর পঁয়ত্রিশের সুবীর।
একই অব’স্থা হয় তার স্ত্রী, মেয়েসহ ছাউনির নীচে আশ্রয় নেওয়া মোট ১৬ জনের। তাদের এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা সুবীরকে মৃ’ত ঘোষণা করেন। বাকিরা সেখানেই চিকিৎসাধীন।
এ দিনই ব’জ্র’পা’তের কারণে মৃ’ত্যু হয় রিজেন্ট পার্কের বাসিন্দা অপর্ণা মণ্ডলের। বছর বাহান্নর অপর্ণাদেবী বাড়ির উঠোনে বসেছিলেন। এমআর বা’ঙুর হাস’পাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃ’ত ঘোষ’ণা করা হয়। বজ্রপাতের আওয়াজ শুনে তিনি হৃদ্রো’গে আক্রা’ন্ত হন বলে অনুমান পুলি’শের।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পার্কের ঘটনাটি ঘটে বিকাল তিনটা নাগাদ। সেখানে নিরা’পত্তার দা’য়িত্বে থাকা সিআইএসএফ কর্মীরা দ্রু’ত আহতদের হাস’পাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। খবর যায় হেস্টিংস থানায়। চিকি’ৎসকদের অনুমান, পানিতে বা’জ পড়ার ফলেই একসঙ্গে এত জন জখম হন। মৃ’ত্যু হয় সুবীরের।
নিজের জন্মদিনে বেড়াতে গিয়ে স্বামীর মৃ’ত্যু মেনে নিতে পারছেন না সুবীরের স্ত্রী স’ঙ্গীতা। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মৃ’ত স্বা’মীর দে’হ আঁ’কড়ে অনর্গল বিলা’প করে চলেছেন তিনি। মায়ের পাশে দাঁ’ড়িয়ে কেঁদে চলেছে সানবী। তাকে সামলাতে কালঘাম ছুটছে জরুরি বিভাগের নার্সদের। দমদমের বিবেকানন্দ প’ল্লিতে সুবীরের বাড়িতেও শোকের ছায়া।
এই ঘটনায় জখমদের মধ্যে দুই বাংলাদেশি পরিবারসহ মোট ৯ জন ছিলেন। এদের মধ্যে দীপক বিশ্বাস যশোরের বাসিন্দা। স্ত্রী কাকলিকে ডাক্তার দেখাতে কলকাতায় এসেছেন। সঙ্গে রয়েছেন দুই মেয়ে প্রীতি ও অবন্তী। কাকলি এবং দীপকের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তার বড় মেয়ে প্রীতি আত’ঙ্কগ্র’স্ত হয়ে রয়েছে। পরে দীপকের দুই মেয়েকে কার্ডিয়োলজি বিভাগে স্থানা’ন্তরিত করা হয়।
একই অবস্থা বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের কাজী জহির উদ্দিন মিঠুর। তিনি বলেন, ‘আচমকা আলো ঝলকাতেই শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। তারপরই দেখি স্ত্রী ছিটকে পড়ে গেল। জোর আওয়াজে কানে তালা লেগে যায়।’ আহতদের তালিকায় রয়েছেন, হাওড়া-ডোমজুড়ের প্রিয়া’ঙ্কা সর্দার, ঝুমা ন’স্কর, বজবজের শেখ মনোয়ার এবং রেশমা বিবি। অবস্থা স্থিতি’শীল হলেও তারা আত’ঙ্ক’গ্র’স্ত।