ভারতবর্ষ বিচিত্র সংস্কৃতির সমন্বয়ের এক দেশ। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলির কোনায় কোনায় রয়েছে নানা রকম আচার এবং রীতিনীতি। এর মধ্যে অনেক কিছুই বইতে লিপিবদ্ধ না হলেও, এগুলি বহুকাল ধরে আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্যময় দিকটিকে বহন করে আসছে। আজ আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি বাঁকুড়ার এক পুজোর কথা নিয়ে। পুজোটির নাম , জিতা ষষ্ঠী পুজো। বাঁকুড়ায় যদিও শুধুমাত্র একটি ষষ্ঠী পুজো নয়, এছাড়াও রয়েছে ওলন ষষ্ঠী যা জ্যৈষ্ঠ মাসে হয় এবং জামাইষষ্ঠী নামে পরিচিত। অপর একটি ষষ্ঠী পুজো ভাদ্র মাসে হয় , যা মন্থন ষষ্ঠী নামে পরিচিত।
• জিতা ষষ্ঠী পালনের নিয়ম
জিতা ষষ্ঠীকে এক ধরনের মেয়েলি ব্রত কথা বলতে পারেন। বাঁকুড়া জেলার ঘরে ঘরে মহিলারা নিজেদের সন্তানদের মঙ্গল কামনা এবং আয়ু বৃদ্ধির জন্য এই ব্রত পালন করে থাকেন। এই ব্রত কথা পালন করা হয় আশ্বিন মাসে। এই ব্রত কথাটি বড় ষষ্ঠী নামেও পরিচিত। মূলত এক্ষেত্রে বাড়ির উঠোনে গর্ত করে সেখানে ধান, আখ, বট গাছের ডাল প্রভৃতি দিয়ে পুজোর স্থান আগে থেকে তৈরি করে নেওয়া হয়। পুজোর স্থানে একটি পিতলের হাঁড়িরি মধ্যে পাঁচটি পাতাযুক্ত আমের ডাল, আখ, বটের ডাল প্রভৃতি রেখে প্রদীপ জ্বালানো হয়। ষষ্ঠীর দিন সন্ধের আগেই ব্রাহ্মণ এবং ব্রাহ্মণী উভয়কে উপস্থিত থাকতে হয়। তবে এখন শুধুমাত্র ব্রাহ্মণের উপস্থিতিতেই পুজো সম্পন্ন করা হয়।
• পুজোর দিন
মহিলারা সকালে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্রে পিতল হাঁড়ির জলের মধ্যে ছোলা ভেজান। পিতল হাঁড়ির গায়ে আঁকা হয় নানান সুন্দর আলপনা। এছাড়াও হাঁড়ির গায়ে জড়ানো হয় সাদা শালুক ফুলের মালা। বাঁশের ডালাতে দেওয়া হয় আতা, পেয়ারা, ঝিঙে, শশা এবং একটি শালুক ফুল। ওই পিতল হাঁড়িটিকে সিঁদুর ও হলুদ মাখিয়ে পুজো করা হয়। ১৩ রকম কাঁঠাল পাতায় ১৩রকম জিনিস দিতে হয়, তার সাথে থাকে হলুদ মাখানো এক টুকরো সাদা কাপড়। পুজোর দিন পরিবারের যে কোনো একজন মহিলা নির্জলা উপবাস থাকেন। পুজো সম্পন্ন হলে ব্রাহ্মণকে দক্ষিণা এবং ছোলা দিতে হয়। ষষ্ঠী তলাতেও ছড়ানো হয় সেই ছোলা।
• ভাসানের দিন
এই জিতা ষষ্ঠী তিনদিন ধরে চলে। একদম শেষতম দিনে বাড়ির বাচ্চাদের নিয়ে গ্রামের মহিলারা পুকুরে ভাসান দিতে যান। তার সাথে সঙ্গে নিয়ে যান খই, মুড়ি, মুড়কি এবং মিষ্টি। ভাসানের পরে সবাই সেই খাবার খেয়ে তবেই ঘরে ফেরেন।