মন্দিরে রয়েছে রামচন্দ্রের পায়ের ছাপ চিহ্নিত দুর্লভ পাথর। বাঙালির মনে প্রাণে রামায়ণের রাম চরিত্র গেঁথে আছে। কেউ বা বীর রূপে আবার কেউ বা ভগবান রূপে পুজো করেন রামচন্দ্রকে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গ প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। কৃষ্ণনগর ও নবদ্বীপের নাম বললে বাঙালির মনে অন্য এক ছবি তৈরি হয়। শ্রী চৈতন্যদেবের জীবন কথা বারবার আকৃষ্ট করে বাঙালির ধর্ম পরায়ণ মনকে।
• পাথরটির অবস্থান
কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপ যাওয়ার পথেই রয়েছে আমঘাটা নামক একটি স্টেশন। নামে স্টেশন কিন্তু ট্রেন চলাটা এখানে অতীত হয়ে গেছে। আমঘাটা থেকে পশ্চিম দিকে কিছুটা দূরে রয়েছে হরিহরক্ষেত্র। এই হরিহর মন্দিরে রয়েছে স্বয়ং রামচন্দ্রের পদ অঙ্কিত পাথর।
• হরিহর মন্দিরের ইতিহাস
এই মন্দিরটির সাথে জড়িয়ে রয়েছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাম। অনেকে মনে করেন, ১৭৬৬ সালে রাজা জীবনের শেষ বয়সে রাজকার্য পরিত্যাগ করে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। গঙ্গার পবিত্র অংশ অলকানন্দা বয়ে গেছে মন্দিরটির পাশ দিয়ে। এছাড়াও রয়েছে মন্দিরের পাশে একটি রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। কালের নিয়মে ঐতিহ্যপূর্ণ থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে অনেক ইতিহাস এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে।
• হরিহর মন্দিরে এই বিশেষ পাথর রাখার কারণ
মন্দির থেকে প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠা ফলক থেকে ধারণা করা হয়, হরিহর মন্দির নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের উদ্দেশ্য ছিল শৈব এবং বৈষ্ণব সম্প্রদায়কে একত্রিত করা। মন্দিরে রয়েছে দুটি চূড়া একটি চূড়াতে শিবের ত্রিশূল এবং অপরটিতে রয়েছে বিষ্ণুর অস্ত্র চক্র।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র চিত্রকূট পর্বত থেকে রামচন্দ্রের পায়ের ছাপ চিহ্নিত পাথরটি আনিয়েছিলেন। যদিও পাথরটি আনার সময় নাকি অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল রাজাকে। মন্দিরে রয়েছে দুটি বিগ্রহ, একটি হরের এবং অপরটি হরির।
এত গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্দিরের ইতিহাস বর্তমানে চর্চিত না হলেও একটি সংস্থার তরফ থেকে মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তাই হয়তো কালের অমোঘ নিয়মে ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এই মন্দিরটি এখনো আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় বিচিত্র ইতিহাসের কথা।