কামাখ্যা মন্দিরের প্রথম পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল নবম শতাব্দীতে। তখন মলেচ্ছা রাজার রাজত্বকাল, সেই সময় ভানামালা ভার্মাদেবের লিপি থেকে প্রথম এই মন্দিরে কথা পাওয়া যায়। এই মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে রয়ে গিয়েছে নানান অস্পষ্ট কাহিনী। এই মন্দিরের প্রবেশ পথেই রয়েছে এক কুণ্ড, এই কুণ্ডটিকে অনেকেই সৌভাগ্য কুণ্ড বলেন। প্রতি বছর এই সময় শুধুমাত্র দেশ নয় বিদেশ থেকেও লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে এই কুণ্ড স্নান করে নিজেদেরকে শুদ্ধ করে তবে মায়ের মন্দিরে প্রবেশ করেন।
এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে একটি জনশ্রুতি। একসময় কোচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ তিনি কুণ্ডের মাহাত্ম্য শুনে পরীক্ষা করতে চান । তিনি আহোম রাজার সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন তৃষ্ণার্থ এবং ক্লান্ত হয়ে জঙ্গলে ঢাকা কুণ্ডের সামনে আসেন । দেখেন সেটির সামনে এক বৃদ্ধ পুজো করছেন। ওই বৃদ্ধ বলেছিলেন যে ওই স্থানে এক দেবী রয়েছেন। যিনি সবার সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করেন। কেউ যদি কোনো প্রার্থনা করে মনের ইচ্ছা জানান তাহলে তা অবশ্যই পূরণ হয়। আসলে ওই কুণ্ডে নাকি ইচ্ছাপূরণের শক্তি আছে।
তিনি সেখানে একটি হীরের আংটি ফেলে মনে মনে বলেছিলেন যদি কাশির গঙ্গাতে তিনি আংটি ফেরত পান তবে তিনি দেবীর মহিমা মানবেন। এই ঘটনার বেশ কিছুদিন পর তিনি কাশীধামে গিয়ে তর্পণ এর সময় ওই আংটি পুনরায় ফেরত পেয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তখন বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়, তখন বহু পণ্ডিতরা শাস্ত্র ঘেঁটে জানান ওই স্থানে দেবী সতীর যোনীদেশ পতিত হয়েছে। তখন রাজার আদেশে জঙ্গল পরিষ্কার হয় , উদ্ধার করা হয় মন্দিরের ভিত।
প্রায় ২ বছর পর ভক্তদের জন্য মন্দিরের দরজা খুলছে ( করোনার কারণে বন্ধ ছিল ) । চলতি বছরে ভিড় এড়াতে কুরিয়ার ব্যবস্থা চালু করা হবে। ২০১৯ সালে এই মন্দিরের রেকর্ড ভিড় হয়েছিল, তখন প্রায় ৩৫ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়।
মূলত ইচ্ছা পূরণের জন্য এই মন্দির বিখ্যাত। অনেকেই আছেন যারা জটিল রোগে বহুদিন ধরে ভুগছেন তারা অনেক আশা করে দেবীর কাছে আসেন সুস্থ হওয়ার জন্য। এই মন্দিরে পিছন দিকে রয়েছে এক দেয়াল, যাকে বলা হয় দেবীর কান। সেখানেই ভক্তরা গিয়ে নিজের মনের কথা জানান। আসলে কথায় আছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর, শুধুমাত্র ভারতবর্ষ নয় বিদেশ থেকেও বহু মানুষ মনের বিশ্বাসের জোরে এই অম্বুবাচীর সময় কামাখ্যা মন্দিরে আসেন।