মালদহের হাবিব পুর থানা এলাকায় রয়েছে লোকমুখে প্রচলিত জাগ্রত এক মা কালীর মন্দির। এখানে মা কালীকে ঘিরে রয়েছে হাড় হিম করা নানান কাহিনী। গ্রামের যেকোনো শুভ অনুষ্ঠানে প্রত্যেকে এই মন্দিরে পুজো দিয়ে যান। আষাঢ় ,কার্তিক ,অগ্রহায়ণ মাসে দেবীকে বিশেষভাবে আরাধনা করা হয় এখানে। এছাড়াও নিয়ম করে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার মা কালীর পুজো হয়।
• মা কালী নাকি শাঁখা পরতে চেয়েছিলেন ?
লোকমুখে কথিত আছে, একসময় নাকি এই অঞ্চলে শাঁখা বিক্রি করতে এসেছিলেন এক শাঁখারি। তার কাছে একটি ছোট্ট মেয়ে শাঁখা কিনতে চান। শাঁখারি তার হাতে শাঁখা পরিয়ে দিয়ে দাম চাইলে মেয়েটি মন্দিরের পথ দেখিয়ে দেন। ছোট্ট মেয়েটি জানান মন্দিরের সেবায়েত তার পিতা, তিনি এই শাঁখার দাম দিয়ে দেবেন।
শাঁখারি কালী মন্দিরে গিয়ে সেবায়েতের কাছে দাম চাইতেই আশ্চর্য হয়ে যান। কারণ সেবায়েত জানান, তাঁর কোনো মেয়ে নেই। ঠিক সেই সময়ই নিকটস্থ পুকুরে দেখেন, জলের উপর দুটো হাত উঁচু করে রয়েছে কেউ, যার হাতে নতুন পড়ানো শাঁখা। তখন কারোরই বুঝতে আর বাকি থাকেনা যে তিনি হলেন স্বয়ং মা কালী।
• দুর্ধর্ষ ডাকাত দল আসত পুজো করতে
অতীতে এই দেবী ছিলেন ডাকাতদের দ্বারা পূজিতা। মালদহের প্রত্যেক লোক জানেন এই ‘ মানিককোড়া কালী’র রোমাঞ্চকর কাহিনী । প্রায় ৩০০ বছর আগে নাকি গভীর রাতের অন্ধকারের পুনর্ভবা নদী পেরিয়ে এই জঙ্গলঘেরা দেবীর পুজো করতে আসতেন ভয়ঙ্কর ডাকাতদল। তারপর সূর্যের আলো দেখার আগেই পুজো সমাপ্ত হতো এবং তারা ফিরে যেতেন। সময়ের সাথে সাথে পুজো উদ্যোক্তাদেরও হাতবদল হয়।
ব্রিটিশ আমলের স্থানীয় জমিদার ভৈরবেন্দ্র নারায়ণ রায় তিনি এই ঘন জঙ্গলের মধ্যে পরিত্যক্ত বেদি দেখতে পান। সেখানেই মা কালীর আরাধনার সূচনা করেন এবং বর্তমানে জমিদারি উঠে যাওয়ার পর এটি গ্রামের বারোয়ারি পুজোয় পরিণত হয়েছে।
• মা কালীকে বেঁধে রাখা হতো শিকলে
লোকমুখে প্রচলিত আছে একসময় পাঁঠা বলির সময় নাকি মায়ের মূর্তি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তে চাইতো। তাই মূর্তি যাতে মাটিতে না পড়ে যায়, তাই বেঁধে রাখা হতো শিকল দিয়ে। গভীর রাতে নাকি দেবীমূর্তি কেঁপে উঠতো। বর্তমানেও পাঁঠা বলি এবং চক্ষুদানের সময় দেবীর মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তাই রোমাঞ্চকর ইতিহাসের সাক্ষী হতে চাইলে, বছরে একবার এই মন্দিরে মায়ের পুজো দিয়ে আসতেই পারেন।