ভারতে পুরুষ এবং মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আমাদের সমাজে নিঃসন্তান হওয়ার কারণে বেশি কটুক্তি শুনতে হয় নারীদের , পাশাপাশি নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সম্প্রতি নতুন WTO মূল্যায়ন অনুসারে, বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে অর্ধেকেরও বেশি পুরুষ ভুক্তভোগী। এই বিষয়ে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (AIIMS) এর চিকিৎসকদের মতে, ভারতে প্রায় ১.০ থেকে ১.২ কোটি দম্পতি প্রতি বছর বন্ধ্যাত্বের স্ক্রিনিং করেন।
তারা জানান , প্রায় তিন দশক আগে সাধারণ ভারতীয় যুবকদের শুক্রাণুর সংখ্যা প্রতি মিলি ছিল প্রায় ৬০ মিলিয়ন, এখন সেটি দাঁড়িয়েছে ২০ মিলিয়নে। পাশাপাশি বয়সের সাথে সাথে বন্ধ্যার ঝুঁকিও বাড়ছে। পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসের ক্ষেত্রে বেশ অনেকগুলি কারণ রয়েছে। সেই তালিকা রয়েছে অনিয়মিত জীবন যাপন, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ,পরিবেশ দূষণ, অস্বাস্থ্যকর খাবার ,মানসিক চাপ , অ্যালকোহল সেবন, ধূমপান প্রভৃতি। পাশাপাশি এক্ষেত্রে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে তামাকের ব্যবহার ।
•ধূমপান মানব শরীরে প্রায় সাত হাজারেরও বেশি রাসায়নিক এবং ROS নিঃসরণ করে। যার ফলে শুক্রাণুর ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং শেষ পর্যন্ত তা বন্ধ্যাত্বের দিকে পরিচালিত হয়। দেখা গিয়েছে, যে পুরুষরা দিনে প্রায় কুড়িটির বেশি সিগারেট খান তাদের শুক্রাণুর সংখ্যা যারা ধূমপান করেন না তাদের শুক্রাণুর তুলনায় প্রায় ১৩ থেকে ১৭ শতাংশ কম ।
•বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাসের অন্যতম একটি কারণ হল অ্যালকোহল সেবন। পাশাপাশি এই অ্যালকোহল পান করলে হরমোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়। যা টেস্টোস্টেরনের পাশাপাশি সার্টোলি এবং লেডিগ কোষের কাজকে প্রভাবিত করে ।
•সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন কিংবা কীটনাশকের মত ক্ষতিকারক পণ্যের বারংবার ব্যবহার পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়াও শাক সবজির ক্ষেত্রে যে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে তা মানবদেহে ক্ষতি ডেকে আনছে। দৈনন্দিন জীবনে যেহেতু সেল ফোন, ল্যাপটপ কিংবা মাইক্রোওয়েভের মত জিনিসগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, সেক্ষেত্রে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নিয়ন্ত্রণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জের সমান।
•অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন নানান ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজা খাবার ,জাঙ্ক ফুড ,অত্যাধিক চিনি কিংবা লবণযুক্ত খাবার স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি অন্যান্য জটিল রোগের অন্যতম কারণ। আর এই সমস্ত কারণ বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা প্রক্রিয়াজাত মাংস খান তাদের শুক্রাণুর সংখ্যা অনেক কম । বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে প্রজনন ক্ষমতার জন্য অত্যন্ত উপকারী।
•বর্তমানে অনেকেই নানান ধরনের ওষুধ ব্যবহার করেন । সেক্ষেত্রে ব্যাথা নাশক বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক কাজে নানান ধরনের পরিবর্তন ঘটায় এবং শুক্রাণু উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
•বর্তমানে বন্ধ্যাত্বের অন্যতম একটি সমস্যা হল স্ট্রেস। স্ট্রেস কোকোর্টিকয়েড কিংবা হরমোনের উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে। শুক্রাণুর গুণমান এবং বন্ধ্যাত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে মানসিক চাপ।