পুরান মতে অসুর নিধনের সময় মা দুর্গা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছিলেন। মার্কণ্ডেয় চণ্ডীর দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর শ্লোকে বর্ণনা রয়েছে সহস্ত্র হাত দেবীমূর্তির । যে মূর্তির বিশালাকার রূপ দেখে স্বয়ং মহিষাসুর চমকে উঠেছিলেন ও তাঁর হাতে বধ হয়েছিলেন। মায়ের এই রুপটিই হাজার হাত কালী নামে পরিচিত। হাওড়ার শিবপুরের ওলাবিবিতলায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হয়ে আসছে এই হাজার হাতের মা কালীর পুজো ।
এলাকাবাসীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ও জাগ্রত এই হাজার হাত কালী মায়ের মন্দির। শুধু তাই নয়, সারা রাজ্য এমনকি সারাদেশ থেকে প্রতিবছর বহু ভক্তদের সমাগম হয় এই মন্দিরে। কথিত আছে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে শিবপুরের ওলাবিবিতলার মুখোপাধ্যায় বাড়ির ছেলে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মা চন্ডীর স্বপ্নাদেশে কালির ওই রূপটি দেখতে পান। কিন্তু সেই সময় হাজার হাত সমেত মা কালী রূপে দেবী চণ্ডীকে প্রতিষ্ঠা করার মত সামর্থ ছিল না আশুতোষ বাবুর। হঠাৎই তখন মন্দির নির্মাণে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি এগিয়ে আসেন বিত্তশালী হালদার পরিবার। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয় হাজার হাত কালী মায়ের মূর্তি। সেই সময় আশেপাশের এলাকা জঙ্গলাবৃত্ত থাকায় এই মন্দিরে পুজো দিয়ে যেতেন ডাকাত ও দস্যুরা।
প্রথমদিকে মূর্তিটি ছিল মাটির তৈরি, পিছনের চালায় হাজারটি হাত আঁকা ছিল। পরবর্তীকালে চুন, সিমেন্ট, বালি, ইঁট ও আমেরিকান প্লাস্টার সহযোগে গঠিত হয় এই বিশাল আকার হাজার হাত কালীর মূর্তি। প্রতিমার মতই মায়ের হাতগুলিও তৈরি ওই একই উপাদান সহযোগে। তবে কথিত আছে এই মায়ের হাত নাকি গোনা যায় না।
বর্তমানে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বংশধরেরাই এই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও সেবায়েতের কাজ করে আসছে। এই কালীমন্দিরে কোন বলির প্রথা নেই। বছরের দুটি দিন অর্থাৎ বুদ্ধপূর্ণিমায় প্রতিষ্ঠা দিবস ও কালীপুজোর দিন এই মন্দিরে জাঁকজমকভাবে পালিত হয় মায়ের পুজো। পাশাপাশি শ্রাবণ মাসের শুক্রবারে বহু দক্ষিণ ভারতীয় ভক্তদেরও সমাগম হয় এই হাজার হাত কালী মন্দিরে।