৯ ই জুলাই অর্থাৎ শনিবার হল বহুদা যাত্রা। এই দিন বাঙালিদের কাছে উল্টোরথ। জগন্নাথ দেব , বলরাম এবং সুভদ্রার রথে চড়ে মন্দিরে প্রত্যাবর্তন করবেন। বাংলার আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে হয় রথযাত্রা। এইদিন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা যান গুন্ডিচা মন্দিরে। সেখানে সাতদিন থেকে আবার প্রত্যাবর্তন করেন । জগন্নাথ দেব সম্পর্কে এমন কিছু কাহিনী আছে যা আজও ভক্তদের মন ছুঁয়ে যায়। তবে জগন্নাথ দেবের জন্য ভোগ তৈরির রান্নাঘর ঘিরে রয়েছে প্রচুর অলৌকিক এবং অদ্ভুত গল্পকথা। পুরীর মন্দিরে এই বিশেষ রান্নাঘরে বাইরে থেকে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
এখানে কাজ করেন প্রায় হাজার জনের বেশি সেবক। তাঁরা বংশ পরম্পরায় জগন্নাথ দেবের ভোগ রান্নার কাজ করে আসছেন। শিশুর বছর ১২ বছর হলেই এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। তারপর তিনি নিজেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত জগন্নাথ দেবের সেবায় নিয়োজিত করেন।পুরীর মন্দিরের এই বিশেষ রান্না ঘরে প্রতিদিন প্রায় ১০০ এর বেশি পদ রান্না করা হয়। তবে রথের দিন জগন্নাথ দেবের জন্য বানানো হয় ৫৬ টি পদ। ভাবলে আশ্চর্য হবেন , প্রতিদিন এখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষের জন্য রান্না করা হয়। কিন্তু এই প্রসাদের এক বিশেষ গুণ রয়েছে। কোনদিনও প্রসাদ বেশি হয়ে নষ্ট হয় না আবার কোনদিনও প্রসাদ কম পড়ে না। যদি লক্ষ লক্ষ ভক্ত আসেন কিংবা সংখ্যায় কম ভক্ত আসেন সেক্ষেত্রেও এই নিয়মের হেরফের কখনো হয়নি।
জগন্নাথ দেবের ভোগ তৈরির এই রান্নাঘরের সমস্ত সামগ্রী পোড়ামাটির তৈরি। কোনদিনও পুরনো পাত্র ব্যবহার করা হয় না । প্রতিদিনের ব্যবহৃত পাত্র ফেলে দেওয়া হয় । রোজ নতুন পাত্রে রান্না করা হয়। শোনা যায় , এই রান্নাঘরের রান্না করার কৌশলও কিছুটা অদ্ভুত। উনুনে একটার উপর আরেকটা পাত্র রাখা হয়। এইভাবে বসানো হয় প্রায় ৭টি পাত্র, আর নিচে থাকে আগুন । কিন্তু সবার আগে রান্না শেষ হয় একেবারে উপরে থাকা পাত্রের।
এই রান্নাঘরে প্রায় ৭৫২ টি মাটির উনুন রয়েছে. এখানে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই কিংবা কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। ঠাকুররা পুরোপুরি কাঠের আগুনে রান্না করেন। শোনা যায় এই রান্না ঘরের ভিতর দিয়েই বয়ে গিয়েছে, গঙ্গা আর সরস্বতী নদী। সেই নদীর জলেই প্রভুর ভোগ রান্না করা হয়। তবে এই নদী বাইরে থেকে দেখা যায় না।ভোগ তৈরির এই রান্নাঘরটি প্রায় ৯টি ভাগে বিভক্ত। যার ২টি ভাগ একটু বেশি বড় আর বাকি ৭টি ভাগ তুলনামূলকভাবে একটু ছোট। পুরীর এই মন্দিরের রান্নাঘরে ভোগের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন পরে প্রায় ৫০ কুইন্টাল চাল, ২৫ কুইন্টাল ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি।