বর্তমানে চেকের মাধ্যমে লেনদেন এই তথ্য প্রযুক্তি সমৃদ্ধ যুগের অন্যতম একটি মাধ্যম।টাকার লেনদেনের জন্য চেক সব থেকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য এবং সব থেকে সহজ ও নিরাপদ বলে মনে করা হয়।যতই নিরাপদ হোক, চেক সই করে কাউকে দেওয়ার সময়ে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এছাড়া চেকের মাধ্যমে ব্যাংক জালিয়াতি এখন হামেশাই হচ্ছে। সামান্য কিছু ভুল হলে, এক্ষেত্রেও হতে পারে বড় বিপত্তি। আপনার টাকা বেহাত হয়ে যেতে পারে।
বর্তমান সময়ে চারিদিকে সাইবার অপরাধীরা রীতিমতো ওঁত পেতে রয়েছে। একটু অসতর্ক হলেই অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে আপনার ব্যাঙ্ক থেকে গায়ের হয়ে যেতে পারে টাকা।তবে জানেন কি, চেক লেখার সময় সমান্য ভুল আপনার কত বড় ক্ষতি করতে পারে? ঠিকমতো চেক লেখা না হলে আপনার অ্যাকাউন্টে জমানো টাকা হাপিসও হয়ে যেতে পারে।এমনকি চেক বাতিল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।চেক লেখার ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি নিয়ম রয়েছে যেগুলি অবশ্যই মেনে চলতে হয়।
১) নাম বা সংখ্যা লিখার সময় মাঝখানে ফাঁকা জায়গা না রাখাঃ-
ব্যাংক চেকে কারো নাম বা টাকার অঙ্ক লেখার সময় মাঝখানে কখনোই প্রয়োজনের বেশি ফাঁকা জায়গা রাখবেন না। কারণ কেউ চাইলে সেই ফাঁকা জায়গায় অক্ষর বা সংখ্যা যুক্ত করে সহজেই চেক জালিয়াতি করতে পারে।ধরুন ‘SUMIT ROY’ নামের কাউকে একটি চেক ইস্যু করতে চান। চেক লেখার সময় SUMIT এবং ROY শব্দ দুটির মাঝখানে বেশি ফাঁকা জায়গা রাখলেন।তখন কেউ হয়ত অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রথম অংশের শেষে ‘A’ অক্ষরটি বসিয়ে দিলো। ফলে চেক দেখলে মনে হবে যিনি লিখেছেন, তিনি “SUMITA” নামের কাউকে চেকটা ইস্যু করেছিলেন।
২) চেকে নাম লেখার পর চেকের শেষ পর্যন্ত দাগ টেনে দেয়াঃ-
যাকে টাকা দেবেন তার নাম লেখা হলে, তার নামের পাশে একটি লাইন টেনে দিন।
৩) টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে A/C Payee উল্লেখ করাঃ-
কাউকে অ্যাকাউন্ট পেয়ী চেক দিতে হলে অবশ্যই চেকের ওপরে বাঁ দিকে ২টি সমান্তরাল লাইন কেটে তার মধ্যে অ্যাকাউন্ট পেয়ী লিখুন।
তাহলে যাকে চেক দিচ্ছেন, শুধু তার অ্যাকাউন্ট থেকেই ওই চেক ভাঙানো যাবে।
৪)বেয়ারার অপশনে টিকঃ-
‘বেয়ারার চেক’ কাউকে দিলে অবশ্যই ‘বেয়ারার’ অপশনে টিক দিয়ে দিন। ধরুন আপনি কাউকে ‘বেয়ারার চেক’ দিচ্ছেন, সেই চেকে যদি ‘বেয়ারার’ অপশনে টিক না দেন তাহলে ওই চেক থেকে যে কেউ টাকা তুলে নিতে পারবেন।
৫)টাকার অঙ্ক লেখার পরে ‘/’ চিহ্ন বসানোঃ-
চেক-এর অ্যামাউন্ট বসানোর পরে অবশ্যই /— এই চিহ্ন দেবেন। তাতে কোনও ভাবেই অতিরিক্ত কোনও সংখ্যা বসিয়ে কেউ জালিয়াতি করতে পারবেন না। প্রতিটি সংখ্যার মধ্যে যেন কোনও ফাঁকা জায়গা না থাকে।জেমন-চেক লেখার ক্ষেত্রে ৫০,০০০এবং ৫০,০০০/- সংখ্যা দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথম সংখ্যার ক্ষেত্রে চাইলেই ডানপাশে একটি শূন্য বসিয়ে টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে ফেলা যায়। কিন্তু দ্বিতীয় সংখ্যাটির ক্ষেত্রে টাকার অঙ্ক লেখার পরে ‘/’ চিহ্নটি বসানোর ফলে সেই সুযোগ আর থাকে না।
৬)সাক্ষরঃ-
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ে যে স্বাক্ষর করছেন, সেই স্বাক্ষরটিই চেক দেওয়ার সময়ে করবেন। আপনি যদি কোনও কোম্পানির হয়ে টাকা দেন, তাহলে কোম্পানির সিলের ছাপ দিয়ে দিন।
৭)চেকে তারিখ লিখে দিনঃ-
কাউকে চেক দেয়ার সময় চেকের পাতার নির্ধারিত স্থানে তারিখের ঘর পূরণ করে দিন। কারন চেকে উল্লেখিত তারিখ থেকে তিন মাস পর্যন্ত এর কার্যকারিতা থাকে। এরপর আর উক্ত চেকটি কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। কারো কাছে আপনার চেক দীর্ঘদিন থাকলে বা চেকের পাতা হারিয়ে গেলে ঐ সময় সীমার পর কেউ পেলেও ভবিষ্যতে জালিয়াতির আশঙ্কা কমে আসবে।
৮)চেকের পেছনে অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং ফোন নম্বর লিখুনঃ-
চেকের পেছনে সব সময় আপনার অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং ফোন নম্বর লিখুন। যদি কোনও কারণে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধির মনে হয় চেক নিয়ে কোনও সমস্যা রয়েছে, তা হলে তিনি ততক্ষণাৎ আপনার সঙ্গে কথা বলে নিতে পারবেন।
৯)চেকে ভুল কিছু লিখলে সেই ভুল লেখার উপরে বা নিচে স্বাক্ষরঃ-
মানুষ মাত্রই ভুল হয়।যদি চেকে ভুল করে কিছু লিখে ফেলেন তাহলে তার উপরে কিংবা নিচে স্বাক্ষর করে দেবেন।
১০)চেক বাতিল হলে সেটি ছিঁড়ে ফেলুনঃ-
অনেক সময় চেক বাতিল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে চেকটিকে অবশ্যই ভালো ভাবে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে তারপরেই ফেলে দেবেন। না হলে চেকটিতে অবশ্যই ‘ক্যানসেলড’ লিখে দেবেন।