বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি শীতলা অষ্টমী হিসেবে পালিত হয়। দোল উত্সহ পালনের ঠিক আট দিন পরে পালিত হয় দেবী শীতলার পুজো (Shitala Puja)। কারণ বসন্ত ঋতু শুধু প্রেম-ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় না, সঙ্গে নিয়ে আসা নানা রোগ-ব্যাধির জীবাণু। বিশেষ করে আগেকার দিনে বসন্ত রোগে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। শীতলা মায়ের পুজো করে অসুখ-বিসুখ ঠেকানোয় বিশ্বাস রাখতেন গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ।
পুরাণ অনুসারে শীতলা আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গারই একটি রূপ। এই বছর ২৫ মার্চ পালিত হবে শীতলা অষ্টমী। এই দিনটি বসোদা অষ্টমী নামেও পরিচিত। ২৫ মার্চ সকালে ৬.২০-তে পড়েছে শীতলা অষ্টমী পুজোর শুভ মুহূর্ত। পুজোর শুভক্ষণ থাকবে সন্ধে ৬টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত। পুজোর সময় থাকবে ১২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। অষ্টমী তিথি শুরু হচ্ছে ২৫ মার্চ রাত ১২.০৯ মিনিটে এবং অষ্টমী তিথির অবসান রাত ১০.০৪ মিনিটে।
শীতলা অর্থে যে দেবী সবকিছু শীতল রাখেন। স্মলপক্স, চিকেনপক্স, হামের মতো যে সব অসুখ গায়ে গুটি বের হয়, সেই সব অসুখ শীতলা নিয়ন্ত্রণে রাখেন বলে প্রচলিত বিশ্বাস। এছাড়া তিনি পিশাচ (মড়া খেকো ভুত) এর হাত থেকেও রক্ষা করেন বলে মনে করা হয়। দেবী শীতলার মূর্তি অনুসারে তিনি গাধার উপরে আসীন। তাঁর এক হাতে পাত্র, অন্যহাতে ঝাঁটা। শীতলা পুজো শুধুমাত্র মহিলারাই করে থাকেন।
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শীতলা পুজো করা হয়ে থাকে। এই দিনে শীতলা মাকে বাসি খাবার নিবেদন করা হয় এবং তাঁর ভক্তেরাও বাসি খাবারও খেয়ে থাকেন। শাস্ত্র অনুসারে শীতলাকে স্বাস্থ্যের দেবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে যে নারী উপবাস করেন এবং শ্রদ্ধাভরে পুজো করেন, তাঁর বাড়িতে অর্থ ও খাবারের অভাব হয় না, তাঁর পরিবার ও সন্তানরা সুস্থ থাকেন। আগেকার দিনে গ্রাম বাংলায় কেউ বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে বলা হত যে তাঁর ‘মায়ের দয়া’ হয়েছে।
পুরাণের কথা
পুরাণ অনুসারে একদা জ্বরাসুর নামে এক রাক্ষস ছিল। এই রাক্ষস যেখানেই যেত, সেখানেই বাচ্চাদের মধ্যে প্রচণ্ড জ্বর ছড়িয়ে পড়ত। জ্বরাসুরের কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মর্ত্যলোকে। তখন শিব ও পার্বতী জ্বরাসুরকে দমন করতে আবির্ভূত হন। মহাদেব ভৈরব রূপ ধারণ করে জ্বরাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং পার্বতী দেবী শীতলার রূপ নিয়ে মর্ত্যলোকে শীতল করতে নেমে আসেন। নিজের হতের পাত্র থেকে তিনি সর্বত্র শীতল জল ছড়িয়ে দেন এবং ঝাড়ু দিয়ে রোগ বহনকারী জীবাণু দূরে সরিয়ে দেন।