জীবনের সবচেয়ে উত্তম মুহূর্ত উপভোগ করতে গেলে, সফলতা কে হাতের মুঠোয় আনতে গেলে হাজারো বাধা-বিপত্তি জয় করে এগিয়ে যেতে হয়। যে সমস্ত মানুষ আজ সফল হয়েছেন তারা নিজের জীবনে হাজারো কষ্ট, বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেছেন। আর সমস্ত বাধা এড়িয়ে সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছানোর জন্য যেটি দরকার সেটি হল অদম্য ইচ্ছা ও অফুরন্ত মনোবল।
যে সমস্ত প্রতিবন্ধী মানুষেরা তাদের প্রতিবন্ধকতাকে নিয়তির অভিশাপ ও নিজের দুর্ভাগ্য বলে মেনে নেয় তারা নিজের জীবনের কাছে হেরে যায়। নষ্ট করে ফেলে তার ভিতরে বিরাজমান সেই অফুরন্ত শক্তিকে যেটা দিয়ে সে করতে পারে যেকোনো অসাধ্যসাধন,তাতে হোক না সে প্রতিবন্ধী,আসুক না হাজারো বাধা। যারা প্রতিবন্ধকতাকে জীবনের একটি সাধারণ অঙ্গ বলে মেনে নিয়ে তার সেই প্রতিবন্ধকতার কষ্ট থেকে এমন কিছু করার শপথ নেই যেটা দুনিয়ার কাছে অসম্ভব বলে মনে হয় তারাই প্রতিবন্ধকতা জয় করে অসাধ্য সাধন করতে পারে।Imag
আমরা অনেকেই হয়তো অরুনিমা সিনহার অসাধ্য সাধন এর কাহিনী জানি। একটি পা কেটে বাদ যাওয়ার পরও বিশ্বের প্রথম মহিলা হিসেবে এভারেস্টের চূড়া জয় করেছিলেন। প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে সাফল্যকে অর্জন করেছিলেন তিনি।
আজ আমরা আর এক অরুনিমার কথা জানতে চলেছি।জিলোমল মেরিয়েট টমাস,২৮ বছর বয়সী কেরালার এই মহিলা দুই হাত না থাকা সত্বেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে এশিয়ার প্রথম ‘ হ্যান্ড হীন মহিলা ড্রাইভার ‘ এর অসম্ভব কীর্তি অর্জন করেন। কেরালার ছোট্ট একটি শহর থোড়ুপুলা তে জন্ম হয় জিলোমল এর। জন্মের সময় থেকেই তার দুই হাত ছিল না। ঈশ্বর তাকে প্রতিবন্ধী হিসেবে পৃথিবীতে পাঠায়। কিন্তু জিলোমল তার প্রতিবন্ধকতাকে দুর্ভাগ্য ও ঈশ্বরের অভিশাপ বলে মেনে না নিয়ে অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অসাধ্য সাধন করার জেদ নিয়ে দুই হাত না থাকা সত্ত্বেও ড্রাইভিং লাইসেন্স অর্জন করে।
ছোটবেলা থেকেই জিলোমল অনেক বিষয়ে পারদর্শী ছিল। তার খুব শখ ছিল গাড়ি চালানোর। কিন্তু সে জানতো হয়তো তার পক্ষে কোনদিন সম্ভব হবে না গাড়ি চালানোর কারণ তার যে দুটি হাত ই নেই। কিন্তু থেমে থাকেনি জিলোমল।
সে জানতে পারে বিক্রম অগ্নিহোত্রী নামক এক ব্যক্তি হাত না থাকা সত্বেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছিল। এই ঘটনা শোনার পর তার মনের ইচ্ছা আরও দৃঢ় হয়। তাই অবশেষে সে অদম্য ইচ্ছাশক্তির দ্বারা ড্রাইভিং লাইসেন্স অর্জন করেছিল।
নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য জিলোমল ২০১৮ সালে মারুতি সেলেরিও কিনেছিল এবং সেই বছরই সে সরকারিভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স পায়। প্রতিবন্ধকতার ফলে যারা জীবনের বাঁচার আশা ছেড়ে দেয় তাদের কাছে জিলোমল হলেন জীবনীশক্তির উৎস।
জিলোমল এর গাড়ি চালানোর একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। যা দেখে বিখ্যাত শিল্পপতি মহিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান আনন্দ মহিন্দ্রাও অভিভূত হয়েছিলেন। তিনি জিলোমল এর সাহসের প্রশংসা করেছিলেন এবং তাকে তার অসাধ্য সাধনের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। পড়াশোনাতেও জিলোমল পিছিয়ে ছিলেন না। তিনি একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে তিনি তার ডিগ্রী কোর্স কমপ্লিট করেন। এছাড়াও জিলোমল চিত্রকলা তেও অত্যন্ত পারদর্শী।
জন্ম থেকেই দুই হাত না থাকা সত্ত্বেও জিলোমল দুই পা ব্যবহার করে গাড়ি চালান।জিলোমল যখন গাড়ি কেনার কথা তার পরিবারকে জানিয়েছিলেন তখন তার পরিবারের কেউ রাজি হয়নি। কারণ সবাই এটা কিছুতেই বুঝতে পারেনি যে তার হাত না থাকা সত্ত্বেও সে কি করে গাড়ি চালাবে। পরিবার প্রথমে রাজি না হলেও জিলোমল এর আত্মবিশ্বাস এবং ইচ্ছাশক্তি দেখে বুঝতে পেরেছিল যে তাদের মেয়ে এই অসাধ্য সাধন করতে পারবে।
কিন্তু আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী শিশুদের সমাজের বোঝা বলে গণ্য করা হয়। এটা ধরে নেওয়া হয় যে তাদের কোনো ভবিষ্যত নেই। তাই কজন পারে জিলোমল হতে। কিন্তু আমাদের কর্তব্য সমাজের এই প্রথা কে বদলানোর। প্রতিবন্ধী শিশুদের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার, তাদের ভবিষ্যৎ কে অন্ধকারের দিকে ঠেলে না দিয়ে আলোর দিশা দেখানো। যাতে আমরা আরো অনেক অরুনিমা সিনহা ও জিলোমল দের পাই।
যদি কোন প্রতিবন্ধী শিশু সঠিক গুরুত্ব পায় তাহলে সেও একদিন সমাজের ও তার পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। আমাদের উচিত সবাই একসাথে এগিয়ে এসে প্রতিবন্ধী শিশুদের পাশে দাঁড়ানো তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তবেই মানব সমাজ এগিয়ে যাবে অগ্রগতির দিকে।