শ্রাবণ মাস শিবভক্তির শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে চিহ্নিত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এই মাসে শিব ও পার্বতী মর্ত্যে নিজের ভক্তদের কাছাকাছিই বাস করেন। তাই এই মাসে নিয়ম-নীতি মেনে শিবের পুজো করলে তিনি শীঘ্র প্রসন্ন হন ও ভক্তদের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূর করেন। শিব পুজো ও শিবের রহস্য সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় শিব পুরাণে (Shiv Puran)। কথিত আছে শ্রাবণ মাসে শিব পুরাণ (Sawan Shiv Puran) পাঠ করা অত্যন্ত শুভ। এর ফলে ব্যক্তির ওপর শিবের বিশেষ কৃপা হয়। শিব পুরাণের রুদ্র সংহিতায় শিব পুজোর শ্রেষ্ঠ নিয়ম সম্পর্কে জানানো রয়েছে। শ্রাবণ মাসের (Sawan 2022) দ্বিতীয় সোমবার সেই নিয়ম জেনে পুজো করলে সুফল পাবেন। নারদ ও ব্রহ্মার কথোপকথনের মাধ্যমে শিব পুজোর শ্রেষ্ঠ নিয়মের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে যা সূত প্রকরণের মাধ্যমে জানা যায়।
ঘুম থেকে উঠে প্রার্থনা করুন:
পুরাণ অনুযায়ী শিব পুজোর এই নিয়ম সমস্ত অভীষ্ট ও সুখ প্রদান করে থাকে। এর জন্য উপাসককে ব্রহ্মমুহূর্তে উঠে জগদম্বা পার্বতী ও শিবের স্মরণ করা উচিত। তার পর করজোরে তাঁর কাছে প্রার্থনা করা উচিত, ‘হে দেবেশ! উঠুন হে ত্রিলোকীনাথ! উঠুন আমার হৃদয়ে বসবাসকারী দেব উঠুন এবং সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের মঙ্গল করুন হে প্রভু। আমি ধর্ম-অধর্ম জানি না। আপনার অনুপ্রেরণায় কাজ করি।’
নিজেকে শুদ্ধ করুন:
এর পর গুরু চরণ স্মরণ করে নিজের শয়নকক্ষ থেকে বেরিয়ে নিত্যকর্ম ইত্যাদি থেকে নিবৃত্ত হন। জল দিয়ে দেহ শুদ্ধ করুন। দুই হাত ও পা ধুয়ে দাঁত পরিষ্কার করে নিতে হবে। এর পর ১৬ বার হাতে জল নিয়ে মুখ ধুতে হবে। সূর্যোদয়ের আগেই এই কাজ করে নিতে হবে। তবে ষষ্ঠী, প্রতিপদা, অমাবস্যা, নবমী ও রবিবার দাতুন করা উচিত নয়। নদী বা বাড়িতেই সময়ের মধ্যে স্নান করে নিন। রবিবার, শ্রাদ্ধ, সংক্রান্তি, গ্রহণ, মহাদান ও উপবাসের দিনে গরম জলে স্নান করবেন না। দিন অনুযায়ী তেল লাগাবেন। তবে যে ব্যক্তি নিয়ম মেনে প্রতিদিন তেল লাগান, তাঁদের জন্য তেল লাগানো কোনও দিনই দূষিত নয়। গ্রহণের দিনে সরষের তেল ব্যবহার করবেন না। পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করে স্নান করুন। স্নানের পর দেবতা ও পিতৃপুরুষদের প্রসন্ন করার জন্য তর্পণ করুন। তার পর স্বচ্ছ পোশাক পরবেন।
পুজোর প্রস্তুতি:
পুজোর স্থান পরিষ্কার ও শুদ্ধ করতে হবে। কাঠের আসনে বসে পুজো করলে অভীষ্ট ফল লাভ করা যায়। সেই আসনে বসে ভস্মের ত্রিপুণ্ড এবং রুদ্রাক্ষ ধারণ করুন। ত্রিপুণ্ড লাগালে জপ-তপ ও দান সফল হয়। তার পর মন্ত্রোচ্চারণ করে আচমন করুন। এবার পুজোর সামগ্রী একত্রিত করে নিন। জল, গন্ধ ও অক্ষতর পাত্র ডান দিকে রাখুন। তার পর গুরুকে স্মরণ করে পরিবার-সহ শিব পুজো করুন।
গণেশ, কার্তিক ও পার্বতীর পুজো:
বুদ্ধি-সিদ্ধি -সহ গণেশের পুজো করতে হবে। ওম গণপতয়ে নমঃ মন্ত্র জপ করে তাঁকে নমস্কার ও ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কার্তিক ও গণেশের পুজো এক সঙ্গে করতে হবে। তার পর দ্বারে উপস্থিত লম্বোদর নামক দ্বারপালের পুজো করুন। তার পর পার্বতীর পুজো করতে হবে। চন্দন, কুমকুম, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য সহযোগে শিবের পুজো করুন। বাড়িতেই মাটি, সোনা, রুপো, ধাতুর শিব প্রতিমা রাখুন। মাটির শিবলিঙ্গ তৈরি করে স্থাপনা করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করুন।
মহাদেবের আবাহন:
বাড়ির মধ্যে পুজো করার সময় মন্ত্রোচ্চারণ করতে ভুলবেন না। শিব পুজোর সময় উত্তর দিকে মুখ করে বসবেন। আসনে বসে গুরুকে নমস্কার করুন ও অর্ঘ্যপাত্র দিয়ে শিবলিঙ্গে জল অর্পণ করুন। তার পর শান্ত মনে মহাদেবের আবাহন করতে হবে।
অভিষেক ও পুজো:
আবাহনের পর শিবের আসন স্থাপন করুন। এর পর পাদ্য ও অর্ঘ্য দিন। পঞ্চামৃত দিয়ে শিবলিঙ্গের স্নান করান। তার পর মন্ত্রোচ্চারণ করে সমস্ত সামগ্রী প্রদান করুন। সুগন্ধী চন্দনের প্রলেপ লাগিয়ে সুগন্ধিত জল ধারা দিয়ে শিবের অভিষেক করুন। আচমন করে জল ও বস্ত্র অর্পণ করুন। মন্ত্রোচ্চার করে শিবকে তিল, যব, গম, মুগ ও বিউলি ডাল অর্পণ করুন। এর পর এক এক করে পুষ্প অর্পণ করতে হবে। শিবের প্রতিটি মুখে পদ্ম, শতপত্র, শঙ্খপুষ্প, কুশ পুষ্প, ধুতুরা, মন্দার, দ্রোণ পুষ্প, তুলসীদল ও বেলপাতা অর্পণ করুন। বেলপাতা অর্পণ করলে শিবের পুজো সফল হয়। এবার সুগন্ধিত চূর্ণ ও সুবাসিত তেল অর্পণ করুন। গুগ্গল ও অগরুর ধূপ দেখান। ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করুন। নৈবেদ্য ও তাম্বুল অর্পণ করে পঞ্চপ্রদীপের আরতি করুন। শিবের পায়ের সামনে চার বার, নাভির সামনে দুবার, এক বার মুখের সামনে ও সমগ্র শরীরে সাত বার আরতী দেখান। এর পর শিবের পরিক্রমা করুন।