ঘটনাপ্রবাহের শুরু সেই মহাভারতে। অর্থাৎ দ্বাপর যুগে। পুরাণ মতে, যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে শ্রীকৃষ্ণ একটি কালো কষ্টিপাথরের ওপর দাঁড়িয়ে আগত ব্রাহ্মণদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এই পাথর রাজা পরীক্ষিত একটি প্রাসাদের তোরণে স্থাপন করেন।
এবার পুরাণ থেকে ইতিহাসে পদার্পণ করার পালা। উক্ত তোরণটি বাংলার মালদহে এবং গৌড়ের নবাবের রাজপ্রাসাদের তোরণ সেটি। চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রধান পার্ষদ নিত্যানন্দ প্রভুর অষ্টম সন্তান বীরভদ্র গোস্বামী স্বপ্নাদেশ পান, তোরণের সেই কষ্টিপাথরটি দিয়ে কৃষ্ণমূর্তি নির্মাণ করতে হবে।
তখন গৌড়ের নবাব সোলেমান খাঁ। তাঁর কাছে খড়দহ নিবাসী বীরভদ্র গিয়ে পৌঁছলে গোমাংস এবং সুরা খাইয়ে তাঁর ধর্মনাশের ষড়যন্ত্র করা হয়। কিংবদন্তি অনুযায়ী, এ সময় কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে। গোমাংসের পাত্র খুলে দেখা যায় সেখানে মাংসের বদলে ফুলের মালা। অন্যদিকে সুরা পরিণত হয় দুধে। সব দেখে ভয় পান নবাব। তিনি বীরভদ্রের কাছে তাঁর রোগক্লিষ্ট জামাইকে সুস্থ করে দেওয়ার অনুরোধ রাখেন। বীরভদ্র তাঁর ঐশ্বরিক ক্ষমতার সাহায্যে তাই করেন এবং বলাই বাহুল্য, পুরস্কারস্বরূপ পাথরটি আদায় করে নেন।
এখানে আরও একটি কিংবদন্তি রয়েছে। কষ্টিপাথরটিকে ভাল করে খড় দিয়ে জড়িয়ে বীরভদ্র গঙ্গাপথে খড়দহের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। পথে একবার সেটি আকনার একটি স্নানের ঘাটে আটকে গিয়েছিল। সেখানে একদল ছেলে খেলেছিল। তারা খেলাচ্ছলে আবারও পাথরটিকে ঠেলে জলে ভাসিয়ে দিলে সরাসরি সেটি খড়দহের ঘাটে এসে পৌঁছয়। অতঃপর বীরভদ্রও খড়দহ পৌঁছে পাথরটিকে উদ্ধার করেন। এবং তিনটি কৃষ্ণবিগ্রহ নির্মাণ করেন।
এই তিন কৃষ্ণবিগ্রহ একত্রে ‘তিন ঠাকুর’ নামে পরিচিত। তিন ঠাকুর যথাক্রমে হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে ৺রাধাবল্লভ জিউ এবং উত্তর ২৪ পরগণার যথাক্রমে খড়দহ এবং সাঁইবনে ৺শ্যামসুন্দর জিউ এবং ৺নন্দদুলাল জিউ। মাত্র একটি ছোট কষ্টিপাথর থেকেই এই তিন কৃষ্ণবিগ্রহের জন্ম।
তিন বিগ্রহ তিন ভাইরূপে কল্পনা করা হয়। ছোটভাই ৺নন্দদুলাল এক্ষেত্রে হলেন মা যশোদা আর নন্দরাজের কোলের ছেলে। তাঁকে পাঠানো হয় স্বামীবন অধুনা সাঁইবনের লক্ষ্মণ পণ্ডিতের কাছে। এরপর মেজভাই ৺রাধাবল্লভ আবার শ্রীরাধিকার প্রেমাস্পদ। তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আকনায় রুদ্র পণ্ডিতের কাছে। আর রাধাবল্লভের নাম থেকেই রুদ্র পণ্ডিত আকনার নতুন নামকরণ করেন বল্লভপুর। আর সবথেকে বড়ভাই ৺শ্যামসুন্দর জিউ। তাঁকে প্রতিষ্ঠা করা হয় খড়দহের-ই গঙ্গা তীরবর্তী কুঞ্জবাটীতে।