আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা – নিজেই আবেদন করবেন যেভাবে : আমেরিকা পৃথিবীর অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং অন্যতম শক্তিশালী দেশ। বলা যেতে পারে, সব সম্ভবের দেশ হল আমেরিকা। যারা একাডেমিক ক্যারিয়ার করতে চান, তাদের জন্য রয়েছে রিসার্চ, পড়াশুনা, জ্ঞানচর্চার দারুণ সব সুযোগ। তাছাড়া ভালো বেতনের চাকুরির জন্য সবচেয়ে ভালো ডেস্টিনেশন এখন আমেরিকা।
তাই বিশ্বের সকল দেশের ভালো শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর জড়ো হচ্ছে এই United Stated of America নামক দেশে। আসছে তারা নিজেরদের উন্নত ভবিষ্যৎ তৈরির স্বপ্ন নিয়ে। অন্যভাবে দেখলে বলা যায়, বিশ্বে পরিশ্রমী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য, আমেরিকা তৈরী করেছে অপার সুযোগ ও নিশ্চিত ভবিষ্যৎ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সেই শক্তিশালী মেধাবীরাই গড়ে তুলছে আরও উন্নত আমেরিকা।
যদিও আমরা মেধাবীদের বিদেশে গিয়ে স্থায়ী বসবাসের বিপক্ষে। তবে বিশ্বের সব দেশের সব ভাষার শিক্ষার্থীদের আমেরিকা নিয়ে উৎসাহের কমতি নেই। আর সেই উৎসাহের ও উদ্দীপনার কথা মাথায় রেখে, আজ আমরা তুলে ধরছি আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার বিষয়ে।“সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর” এর “পেশা পরামর্শ সভা”র জণ্য এই আর্টিকেলটি লিখেছে “শামস বিশ্বাস”
কেন আমেরিকায় পড়তে যাবেন?
জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, আগে প্রাচ্য ছিল জ্ঞানের আধার। জ্ঞানার্জনের জণ্য সারা পৃথিবী থেকে মানুষ আসতো ভারতীয় উপমহাদেশে বা চিনে। কালের পরিক্রমায় আজ সেই অবস্থা বদলে গেছে। এযুগে পাশ্চাত্যের আমেরিকা হয়েছে জ্ঞান ও বিজ্ঞানের আখড়া। একসময় মূলত আনন্দ লাভের জন্য জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা হতো। কিন্তু আজ আনন্দ লাভের পাশাপাশি আয় করায় প্রয়োজনীয়। আমেরিকা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ব্যবহারে করে আয় করার সুযোগও করে দিচেছ।আমেরিকা ৫০ টি স্টেটস বা অঙ্গরাজ্য নিয়ে গঠিত। আমেরিকার আয়তন ৯৮,৩৩,৫২০ বর্গকিলোমিটার আর জনসংখ্যা ৩২৮ মিলিয়ন। এই দেশের রাজধানী ওয়াশিংটন ডি,সি, আর সবচেয়ে বড় শহর নিউ ইয়র্ক। অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ এই দেশের জিডিপি ২২.৩ ট্রিলিয়ন।
এই দেশের আবহাওয়া অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। আমেরিকা তেমন দেশ, যে একটি দেশর মধ্যেই আছে ৯টি স্টান্ডার্ড টাইম জোন। তাহলে বুঝতেই পারছেন, এই দেশ কতটা বড় আর কতটা বৈচিত্র্যময়।
এই বিরাট দেশটিতে রয়েছে পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক বিষয়ে লেখাপড়ার সুযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলাতে অধ্যয়নরত ছাত্রদের জন্য রয়েছে বহু রকম ক্যটাগারিতে বৃত্তির সুযোগ। গবেষনার জন্য রয়েছে নানা রকম ফান্ড। নতুন ফান্ড নেবার সুযোগ ও সংস্কৃতিও রয়েছে উন্মুক্ত।
আমাদের মতো ৩য় বিশ্বের ছেলেমেয়েদের অনেক সময় লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ দরকার হয়। সেরকম সুযাগও রয়েছে অপার। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া চলাকালিন সময়ে, ইন্টার্ন বা অন্যান্য বিভিন্ন ভাবে যুক্ত হবার সুযোগ আছে সংশ্লিষ্ট শিল্পে। পাশ করে বের হবার পরে একটা মোটামাুটি কর্মসংস্থান মোটামুটি নিশ্চিত।
তাই আমেরিকাতে যাবার জন্য এত আগ্রহ। সে কারণেই হয়তো আপনিও চাচ্ছেন লেখাপড়ার জণ্য আমেরিকা যেতে।
আমেরিকাতে পড়তে যাবার নুন্যতম যোগ্যতা:
আপনি যদি অনার্স বা ব্যাচেলর পড়তে যেতে চান, তাহলে আপনাকে SAT বা ACT পরীক্ষা দিতে হবে। এসব পরিক্ষায় প্রত্যাশিত ফলাফল করতে হবে। এর পরে আপনার পছন্দের কলেজ কিম্বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফর্ম ফিলাপ করে আবেদন করতে হবে।
মনে রাখবেন – ব্যাচেলরে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলো মূলত তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে, কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে ভর্তি করে না। আমাদের দেশে যেমন হয় তার উল্টোটি।
এও মনে রাখবেন যে, ব্যাচেলর কোর্সে প্রথম দুই বছর সব ডিসিপ্লিনে একই বিষয় পড়ানো হয়। তাই, ব্যাচেলরের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন না করেই আপনাকে প্রথম দুই বছর লেখাপড়া করতে হবে। তার পরে আপনার যোগ্যতা ও মেধা অনুযায়ী, আপনার প্রতাশিত কোর্সের মধ্য থেকে পছন্দেরটি বেছে নিতে পারবেন।
আপনি যদি মাস্টার্স করতে যেতে চান, তবে আপনার GRE/ GMAT এর স্কোর প্রয়োজন হবে। মাস্টার্স এর বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে, আপনাকে আপনার ব্যাচেলরের ডিগ্রীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যে কোন বিষয় নির্বাচন করতে হবে। মাস্টার্স দুই রকম হয়ে থাকে – কোর্স বেজড ও থিসিস বেজড।
আমেরিকায় পড়তে যাবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নূন্যতম রিকোয়ারমেন্ট থাকে GRE/GMAT আর IELTS/TOEFL এর স্কোর। অর্থাৎ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য এই যোগ্যতা থাকতেই হবে। মনে রাখবেন – এই স্কোরই আপনার ভর্তিকে নিশ্চিত করবে না। তবে ভালো GRE/ GMAT স্কোর ভর্তির দৌড়ে আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
আমেরিকায় বিভিন্ন শ্রেনীর বা ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে- আপনি আপনার সুবিধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পেয়ে যাবেন।
আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স সার্চ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন:
আমেরিকা আপনি আপনার পছন্দ যেকোন বিষয়ে লেখাপড়া করতে পারবেন, ডিগ্রি নিতে পারবেন । যেকোন বিষয় মানে, আসলেই যেকোন বিষয়ে। কারণ গবেষনা বা বাস্তবায়ন, যেকোন বিষয়ে নতুন একাডেমিক কোর্স অফার করতে, সবসময় এগিয়ে থাকে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় গুলো।আপনি পড়তে পারেন বিজ্ঞানের যে কোন শাখায়, পড়তে পারেন ইঞ্জিনিয়ারিং এর যেকোন অঙ্গনে, ধরতে পারেন বিজনেস স্কুলের যেকোন অলি-গলি কিম্বা মেডিকেল টেকনোলজী বা সাইন্স সব বিষয়েই পড়তে পারবেন।
মনে রাখবেন আমেরিকাতে আপনি কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স, ম্যাথ, বায়োলোজী, বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন, আইন, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর বাস্তব প্রায়গিক বিদ্যায়। এগুলো নিয়ে গবেষণামুলক লেখাপড়াও করতে পারেন। তবে আমেরিকাতে প্রযুক্তিবিদ্যা ও এপ্লাইড সায়েন্স এ উৎসাহিত করা হয়।।
কোর্স সিলেকশনের চিন্তাটা গেলে এখন আসবে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন:
কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেবেন? কি কি কারনে সেই বিশ্ববিদ্যালয় টি আপনার জন্য ভালো? এসব বিষয়ে কখন কিভাবে আগাবেন? – এরকম অনেক প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের রয়েছে। ব্যাপারগুলো জানার আগে খুবই কনফিউজিং এবং কঠিকন মনে হতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, একটু কষ্ট করে একবার বুলে নিলেই হয়ে যাবে “জলবৎ তরলং”, অর্থাৎ জলের মতো সহজ [ যদিও কঠিন করে বলতে চাইলে জলের বিষয়গুলো তত সহজ নয়]।
কোন ইউনিভার্সিটি সেরা?
এটা একটা খুব কমন একটা প্রশ্ন। আর এই প্রশ্নটাকে সামনে রেখে, ইউএসনিউজ প্রতিবছর একটা র্যাঙ্ক লিস্ট প্রকাশ করে। https://www.usnews.com/best-graduate-schools। এই র্যাঙ্ক লিস্টটি মোটামুটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। এই র্যাঙ্কিং করার সময় ইউনিভার্সিটিতে – শিক্ষকের কোয়ালিটি, তাদের মোট প্রকাশ করা পেপার, সেই পেপারগুলোর মান, ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রদের দেয়া আর্থিক সাহায্য – এই সবকিছুকে বিবেচনা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটিতে পার্কিং সুবিধার মত বিষয়গুলোও বিবেচনা করা হয়। একাডেমিক বিষয়ের বাইরে অনেক তথ্য বিবেচনা করা হয় বলে, অনেকেই এই র্যাঙ্কিং প্রথার বিরুদ্ধে মতামত দিয়ে থাকেন। তবে সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে এই র্যাংক ব্যবস্থাটি এখনো সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সিস্টেম।
এই র্যাঙ্ক লিস্টটা দেখতে হলে টাকা দিতে হয়। পয়সা না দিয়ে শুধুমাত্র উপরের দিকের কয়েকটা ইউনিভার্সিটির নাম দেখা যায়। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম বিভিন্ন সময় এই রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নিউজ করে থাকে। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা কঠিন নয়। একটু ইন্টারনেটে সার্চ করলেই একটা পরিস্কার ধারনা করা যায়।
ফান্ড বা স্কলারশিপ এর সুযোগ :
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ টার্গেট থাকে ফান্ড বা স্কলারশিপ। আপনি যদি ফান্ড বা স্কলারশিপ পেতে চান, তবে আপনাকে থিসিস বেজড মাস্টার্স নির্বাচন করে, সেই অনুযায়ী প্রফেসর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর তার আন্ডারে রিসার্চ করার জন্য প্রস্তাব করতে হবে। এই কাজটি খুব মনোযোগ দিয়ে সাবধানে করা জরুরী।
আপনি এই কাজটি দুই ভাবে করতে পারেন। আপনি যদি আপনার রিসার্চ এররিয়া নিশ্চিত হয়ে থাকেন, তবে আপনার সেই এরিয়ার প্রফেসরদের খুঁজে বের করুন। তারপর আপনার পোর্টফোলিও পাঠিয়ে তাদের কনভিন্স করার চেষ্টা করুন। আবাপ আপনি যদি আপনার রিসার্চ এর বিষয় নিয়ে নিশ্চিত না থাকেন, তবে আপনাকে অন্য উপায়ে আগাতে হবে। আপনাকে প্রথমে প্রফেসরদের খুঁজে বের করতে হবে। এরপর তাদের রিসার্চ এরিয়া মাথায় রেখে, আপনার নিজের পোর্ট-ফোলিও সাজাতে হবে। এরপর সেটা তাদেরকে মেইল করে পাঠিয়ে কনভিন্স করার চেষ্টা করতে হবে।
প্রফেসর যদি আপনার প্রস্তাব পছন্দ করেন তবে আপনার সাথে যোগাযোগ করবেন। রিপ্লাই আসতে কিছু ক্ষেত্রে সময় লাগতে পারে। তাই অস্থির হবেন না বা অস্থিরতার পরিচয় দেবেন না। আপনি প্রফেসরের দৃষ্টি আকর্ষনে সামথ্য হলে, বা আপনার মেইল প্রফেসরের ভালো লাগলে, আপনাকে রিপ্লাই দেবে।
এরপর আপনার সাক্ষাৎকার হতে পারে। প্রফেসররা সাধারণত স্কাইপি, গুগুল টক, জুম বা অথবা অন্য মিডিয়ামে আপনার ইন্টারভিউ নিয়ে থাকে। সেটার জন্য ভালো ভাবে প্রস্ততি নিন। সঠিক প্রশ্নের সময়মত সঠিক উত্তর দেয়া জরুরী। প্রফেসর আপনার ইন্টারভিউতে সন্তষ্ট হলে ধরে নিতে পারেন আপনার কাজটা প্রায় হয়ে গেছে।
আমেরিকায় প্রফেসররা অথরিটি অনেক। একজন প্রফেসর চাইলে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিরেক্ট এডমিশন দিতে পারেন। প্রফেসর যদি আপনাকে রিকমেন্ডেশন করেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ আপনাকে ভর্তির বিষয়ে অনেক বেশি আন্তরিক হবে। প্রফেসরের রিকমান্ডেশন থাকলে স্কলারশিপ পেতে আর কোন বাধা থাকে না।
প্রফেসর যদি আপনাকে নেযা ফলপ্রসু হবে মনে করেন, তবে তিনি আপনার জন্য অনেক কিছুই করতে পারেন। প্রফেসর চাইলে তার কাছে বরাদ্দ রিসার্চ ফান্ড থেকে আপনাকে RA (Research Assistant) হিসেবে নিতে পারেন। তিনি চাইলে আপনাকে TA (Teacher’s Assistant) হিসেবে নিতে পারেন। যার মাধ্যমে আপনার কোর্স ফি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন – পিএইচডি মাত্রই রিসার্চ বেজড। তাই রিসার্চ করার মন ও মানসিকতা নিয়েই পিএইচডি করার সিন্ধান্ত নিন এবং সেই অনুযায়ী এপ্লাই করুন।
আমেরিকায় পড়তে ভাষাগত দক্ষতা :
ভাষাগত দক্ষতা বিষয়টি খুবই জরুরী। আপনার সুযোগ পাওয়া না পাওয়ার অনেক খানি নির্ভর করে ভাষাগত দক্ষতার উপরে। আগেই বলেছি, আমেরিকায় লেখাপড়া করার জন্য আপনাকে TOEFL অথবা IELTS পরীক্ষা দিতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিকোয়ারমেন্ট ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আবার সময়ের সাথে সাথে রিকোয়ারমেন্ট বদলায়। তাই আপনি আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে রিকোয়ারমেন্টগুলো ভালো ভাবে দেখে নিন। কয়েকটি ডকুমেন্ট পড়লেই বুঝতে পারবেন। এটা জানা খুব কঠিন কিছু নয়। প্রস্ততির অংশ হিসেবেই করুন।
এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যারা তাদের ভর্তির জন্য TOEFL/ IELTS এর বাধ্যবাধ্যকতা রাখে না। তবে আমেরিকাতে যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার জন্য এই পরীক্ষা দিয়ে রাখা ভালো। কোথাও এই স্কোর কাজে না লাগলেও, আপনাকে এগিয়ে রাখবে আমেরিকান ভিসা প্রাপ্তিতে ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময়সীমা ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস :
আমেরিকায় যেকোন বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্তির জন্য, প্রথমেই আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ভর্তির শর্তগুলো পড়ে নিতে হবে। এরপর ভর্তির আবেদন ফরম খুঁজে সেটা সঠিক ভাবে পূরণ করতে হবে। আবেদন পত্র জমা দেবার সাথে আবেদন ফি জমা দিতে হবে। মানে রাখবেন – আবেদন ফি জমা না দিলে, আবেদনের প্রক্রিয়া শুরুই হবে না।
আমেরিকাতে ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি সকল ধরণের প্রোগ্রামে ভর্তি হবার সুযোগ আছে। ওখানে বছরে তিনটি সেমিস্টার থাকে। Spring সেমিস্টার চলে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত। Summer সেমিস্টার চলে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত। তাছাড়া ভর্তি চলে Fall Semester এ। Fall Semester এর ব্যাপ্তি আগস্ট থেকে ডিসেম্বর। Fall Semester এ মূলত International Student ভর্তি করা হয়। এই সময়েই বেশি স্কলারশিপ অফার করা হয়।
নোট রাখুন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়সীমা আলাদা। তাই আবারও বলছি, আবেদন করার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ভর্তির সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে নিন। কোন বিভ্রান্তি থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন আফিসে যোগাযোগ করুন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন আফিস সচরারচর দ্রুততার সাথে রিপ্লাই দেয়।
আমেরিকার যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য কমন কিছু কাগজ লাগে।
এই তালিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষের পছন্দ ভেদে কম বেশি হতে পারে। তবে এই কাগজগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাগবেই।
আমেরিকার যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য কমন কাগজপত্রের তালিকা :
১। সকল একাডেমিক সার্টফিকেট এবং মার্কশীট [ ইংরেজী ভাষাতে ইস্যুকৃত হলে ভালো হয়, তা না হলে সর্টিফায়েড ডুপ্লিকেট কপি নিতে হবে ]
২। রিকমেন্ডেশন বা রেফারেন্স লেটার [ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । খেয়াল রাখবেন তাতে যেন আপনার প্রাসঙ্গীক কাজ সম্পর্কে কথা থাকে, এবং সেই সম্পর্কে পজেটিভ কথা থাকে ] ।
৩। Statement of Purpose বা SOP [ এ সম্পর্কে পরে বিস্তারিত জানানো হবে ]
৪। পাসপোর্টের কপি [ ভ্যালিড ডেট সহ ]
৫। পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৬। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র [ আপনার ক্ষেত্রে যেটি কার্যকর হবে ]।
৭। মাস্টার্স বা “Post-Grad” শিক্ষার্থীদের জন্য TOEFL/IELTS এবং GRE/GMAT। “Under graduation” এর জন্য SAT/ACT।
রিকমেন্ডেশন বা রেফারেন্স লেটার :
আমেরিকার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য রিকোমেন্ডেশন লেটার প্রয়োজন হয়। রিকমান্ডেশন লেটার নিতে হয় কোন স্বনামধন্য প্রফেসরের কাছ থেকে। আবার এমন কারও কাছ থেকেও রেকমান্ডেশন নিতে পারেন, যিনি বিখ্যাত কোন পেশাজিবী বা পেশাজিবী আইকন। তবে এমন কারও কাছ থেকে নিতে হবে একাডেমিতে যার গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে।
রিকমান্ডেশন লেটার অবশ্যই প্রাসঙ্গীক হতে হবে। রেকমান্ডেশনটি পড়ে, পাঠকের অনুভূত হতে হবে, আপনি রিকমান্ডেশন দাতার সুপরিচিত। পাশাপাশি যিনি রিকমান্ড করছেন তিনি আপনার আপনার সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পর্কে ভালো জানেন। রিকমান্ডেশনটি ব্যক্তি ও তার যোগ্যতার বিষয়ে সুচিন্তিত মতামত মনে হতে হবে।
সর্বশেষ কথাটি হচ্ছে রিকমান্ডেশন লেটারটি পজেটিভ হতে হবে। তাই আপনার সমন্ধে যিনি পজিটিভ লিখবেন, তার কাছ থেকে রিকোমেন্ডেশন লেটার নেওয়ার চেষ্টা করুন। রিকোমেন্ডেশন লেটার আপনার ভর্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।