পুজো আসতে আর কুড়ি দিনও নেই। এখন থেকেই বাঙালি মন ছটফট করছে কবে ব্যাগপত্তর গুছিয়ে কোথাও ছুট্টে চলে যাওয়া যায়। গত দেড় বছর করোনা ভাইরাসের তান্ডবে ঘোরাঘুরি একেবারেই শিকেয় উঠেছিল। তাই এবার পুজোর ছুটিতে পরিবারের সকলকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়াটা মাস্ট। সেক্ষেত্রে আপনি যেতে পারেন পঞ্চ প্রয়াগের এক প্রয়াগ দেবপ্রয়াগে। এখানেই মিলিত হয়েছে দুই নদী অলকানন্দা ও ভাগীরথী। তারপরেই সেই মিলিত ধারা গঙ্গা নামে সমতলে বয়ে গেছে। পুরাণের গল্প অনুসারে, ঋষি দেব শর্মা এখানে দীর্ঘদিন তপস্যা করেছেন তাই তাঁর নামানুসারেই এই স্থানের নাম দেবপ্রয়াগ। আবার সৃষ্টির আগে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এখনেই কয়েক কোটি বছর তপস্যা করেছিলেন। শোনা যায়, শ্রীরামচন্দ্র দেবপ্রয়াগে একাধিক শিব লিঙ্গ স্থাপন করেছিলেন। দেবপ্রয়াগ উত্তরাখন্ডে অবস্থিত। আর উত্তরাখন্ডকে বলা যায় হিন্দু ধর্মের পীঠস্থান। তাই জীবনে একবার অন্তত হরিদ্বার বা দেবপ্রয়াগ যাওয়া উচিৎ। সঙ্গে প্রকৃতিপ্রেমীদেরও নিরাশ করবে না দেবপ্রয়াগ। প্যাঁচালো পাহাড়ী রাস্তার ভ্রমণ, মেঘেদের হাতছানি, রাস্তার পাশেই খরস্রোতা নদী মন ছুঁয়ে নেবে।
দেবপ্রয়াগে যেতে হলে মূলত হরিদ্বার হয়েই যেতে হয়। হরিদ্বার থেকে দেবপ্রয়াগের দূরত্ব ৯৫ কিমি। হরিদ্বার থেকে গাড়ি, বাস বা শেয়ার ক্যাবে যেতে পারেন। সময় লাগে তিন ঘন্টা। দেবপ্রয়াগের তিনটি দিকে তিনটি পাহাড় রয়েছে সেগুলি হল গিদ্ধঞ্চল, দশরথঞ্চল ও নরসিংহঞ্চল। খাতলিং হিমবাহের পাদদেশে গোমুখ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে ঈষৎ নীলচে বর্ণের ভাগীরথী আর সতোপন্থ হিমবাহ থেকে জন্ম নিয়েছে সাদা বর্ণের অলকানন্দা, দেবপ্রয়াগে তাঁদের সঙ্গম হয় এবং মর্ত্যে বয়ে যায় গঙ্গা। দেবপ্রয়াগে প্রচুর লোক স্নান করতে আসেন। আপনিও একবার স্নান করতে পারেন পবিত্র জলে। তবে বয়স্ক বা বাচ্চাদের একাবারেই জলে নামা উচিৎ নয়। কারণ ওখানের জলে সর্বদা ঘুরছে ফলে জলের নীচে কারেন্ট তৈরি হয়। তাছাড়া গতিও ভয়ঙ্কর। ঘাটের সঙ্গে লোহার শিকল লাগানো আছে, সেগুলিও ধরে ধরেই স্নানে নামেন পুণ্যার্থীরা। দেবপ্রয়াগে একই দিনে আরও দেখে নিতে পারবেন রঘুনাথ মন্দির, ভুবনেশ্বরী মন্দির, নাগরাজ মন্দির এবং চন্দ্রাবনী মন্দিরের মতো পবিত্র তীর্থ স্থান।
অন্যদিকে হরিদ্বারে পবিত্র নির্মকল গঙ্গায় সকলের মনপ্রাণ প্রসন্ন করবে। সারা বছরই এখানে ঋষি, মুনিদের আনাগোনা চলে। হরিদ্বারের পুণ্য গঙ্গায় একবার অবশ্যই স্নান করুন। হরিদ্বারের সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ সন্ধ্যার গঙ্গারতি। এছাড়া প্রধান দর্শনীয় স্থলগুলির মধ্যে মনসাদেবী মন্দির, বিল্বকেশ্বর মহাদেব মন্দির, শান্তিকুঞ্জ, পতঞ্জলী যোগপীঠ, চণ্ডীদেবী মন্দির, ভীমগোডা মন্দির, বিশ্বকেশ্বর মন্দির, মায়াদেবী মন্দির, স্বামী বিবেকানন্দ পার্ক, গীতা ভবন, পারদ শিবলিঙ্গ, রাঘবেন্দ্র মন্দির, ভপতওয়ালা, ভারতমাতা মন্দির, বৈষ্ণোদেবী মন্দির, সপ্ত সরোবর প্রভৃতি অনেক কিছুই আছে।
কীভাবে যাবেনঃ হাওড়া বা কলকাতা স্টেশন থেকে বেশ অনেকগুলিই হরিদ্বার যাবার ট্রেন উপলব্ধ। সময় লাগে প্রায় ১ দিন ৫ ঘন্টা।
কোথায় থাকবেনঃ দেবপ্রয়াগ গেলে হরিদ্বারেই থাকুন। সস্তায় অনেক আশ্রমও পেয়ে যাবেন। তাছাড়া আছে প্রচুর হোটেল। দাম শুরু ৮০০-১০০০ টাকা থেকে।
খরচঃ দিন পাঁচেকের জন্য হরিদ্বার এবং দেবপ্রয়াগ ঘুরতে গেলে জনাপ্র্যি খরচ হতে পারে আনুমানিক ৫-৬ হাজার টাকা।