কথাতেই আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর তার মধ্যেই রয়েছে অজস্র ব্রত কথা। গ্রাম বাংলার বহু মানুষ আজও সংসারের সুখ-সমৃদ্ধির আশায় বহু ব্রত নিষ্ঠাভরে পালন করেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রদোষ ব্রত। মনে করা হয় , দেবাদিদেব শিবকে সন্তুষ্ট করতে এই ব্রত অবশ্যই পালন করা উচিত। ২০২২ সালে ২৯শে মার্চ অর্থাৎ মঙ্গলবার কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথি হওয়ায় এই দিনে প্রদোষ ব্রত পালিত হবে। যেহেতু মঙ্গলবার, তাই এটি হবে ভৌম প্রদোষ। এই দিনে ত্রয়োদশী তিথিতে ভগবান শিবের পুজো করলে সব ধরনের রোগ দূর হয়। শিব পুরাণ অনুসারে, প্রদোষ ব্রত সকল প্রকার ইচ্ছা পূরণকারী বলে মনে করা হয়। প্রতি মাসে এই উপবাসটি কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে পালন করা হয়। এই উপবাস ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। এই উপবাসে প্রদোষে সন্ধ্যায় শিবের পুজো করা উচিত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী , যদি সংসারের অভাব জাঁকিয়ে বসে তাহলে এই ব্রত পালন করলে সুফল পাওয়া যায়।
কী করবেন এই বিশেষ দিনে ?
চৈত্র মাসের প্রদোষ উপবাস গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে ভগবান শিবকে বিশেষ জল নিবেদন করা হয়। মন্দিরে, শিবলিঙ্গ জলে ভরা থাকে। চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রদোষ উপবাসে ভগবান শিবকে গঙ্গাজল ও সাধারণ জল সহ দুধ নিবেদন করা হয়।
সপ্তাহের দিন অনুসারে প্রদোষ ব্রতের গুরুত্ব পরিবর্তিত হয়। মঙ্গলবার প্রদোষ ব্রতের পালন করলে স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। এই উপবাসের প্রভাবে রোগ-ব্যাধিও দূর হয়। এর পাশাপাশি কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা থাকে না। এই দিনে শিব-শক্তির আরাধনা করলে দাম্পত্য সুখ বাড়ে। মঙ্গলবার প্রদোষ ব্রতের পুজো করলেও জীবনের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ভৌম প্রদোষের সংমিশ্রণে বহু প্রকার দোষ দূর হয়। এই সংমিশ্রণের প্রভাবের কারণে অগ্রগতি অর্জিত হয়।
প্রদোষ ব্রত পালনের পদ্ধতি
এই উপবাস জল ছাড়া করা হয়। সন্ধ্যায় এই উপবাসের বিশেষ পুজো করা হয়। তাই সূর্যাস্তের আগে সন্ধ্যায় আবার একবার স্নান করা উচিত। পরিষ্কার সাদা পোশাক পরে এবং পূর্ব দিকে মুখ করে ভগবান শিব ও দেবী পার্বতীর পুজো করুন। পুজোর প্রস্তুতি নেওয়ার পর উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ রেখে শিবের পুজো করা উচিত। যদি মনে করেন নির্জলা উপবাস রাখতে পারবেন না তাহলে নিজের শরীরকে কষ্ট না দিয়ে অবশ্যই জল এবং ফল খেতে পারেন।
ত্রয়োদশী তিথিতে উপবাসের জন্য, সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে স্নান করুন। উপবাস ও শিবের উপাসনা করার প্রতিজ্ঞা নিন। সূর্যাস্তের আগে স্নান করুন এবং পরিষ্কার সাদা কাপড় পরুন। প্রথমে গণেশের পুজো করুন। তারপর মাটির শিবলিঙ্গ তৈরি করুন এবং তার সাথে দেবী পার্বতীর পুজো করুন। এই দিনে ভগবান শিব ও পার্বতীকে জল, দুধ, পঞ্চামৃত ইত্যাদি দিয়ে স্নান করাতে হবে। বেল পাতা , ফুল, পুজোর উপকরণ দিয়ে পুজো করে নৈবেদ্য অর্পণ করবেন।